রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অবৈধ’ নিয়োগ বন্ধে দুই প্রশাসনভবন ও সিনেটভবনে তালা ঝুলিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা। একইসঙ্গে আগামী ৬ মে পর্যন্ত প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার (২ মে) দুপুরে ওই তিনভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স কমিটির সভা বন্ধের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ৪ ঘণ্টা অবস্থান করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।পরে ভিসির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকরা দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান উল ইসলাম দাবি করেন, উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষ আগামী ৬ মে। আর বাকি মাত্র রয়েছে চার দিন। বিদায় লগ্নে নিয়োগ-বাণিজ্যের জন্য এডহক ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত আর্থিক ফায়দা লুটতেই এমন অপকর্মে জড়াচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে ‘দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক’ সমাজের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া প্রগতিশীল শিক্ষকরা বলেন, ‘করোনাকালে দেশের সবকিছু বন্ধ থাকলেও ভিসি তড়িঘড়ি করে তার সব আইনবহির্ভূত ও অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করেই চলেছেন। এরমধ্যে রয়েছে, টেন্ডার, নির্মাণ, মেরামত ও সংস্করণ এবং এডহক নিয়োগ প্রক্রিয়া। যা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ও জনমনে নানা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শেষ সময়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৫০ বিঘার জমির লিজ দিয়ে পুকুর খননের নামে কোটি কোটি টাকার মাটি বাইরে ইট ভাটায় বিক্রি করছে বর্তমান প্রশাসন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের সংশ্লিষ্টতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ চুরি বা লুটের ঘটনা নজিরবিহীন। মাটি চুরির ঘটনায় কৃষি প্রকল্পের প্রধান প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহার রহস্যজনক নীরবতা দেখে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা এ প্রকল্পের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও মাটি লুটকারীদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এমনকি আইনের আশ্রয়ও নেননি।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক ড. সুলতান-উল-ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এস এম এক্রাম উল্যাহ, সাবেক প্রক্টর ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মজিবুল হক আজাদ খান প্রমুখ। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে ফাইন্যান্স কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই সভা বন্ধ করতে সকাল ৯টা থেকে উপাচার্য বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ ও স্থানীয় চাকরিপ্রত্যাশীরা। সেখানে মাস্টাররোল কর্মচারীরাও সংহতি প্রকাশ করে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানান।
গেটে তালা দেয়া ও অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে গত বছর ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছিল। এতে তার দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে আজকের সভায় আরও বড় ধরনের অনিয়ম করবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এজন্য আমরা মিটিং স্থগিতের দাবিতে অবস্থান নিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদের শেষ ফাইন্যান্স কমিটির সভা ছিল। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে স্থগিত করা হয়। আন্দোলনকারীরা তালা দিয়ে বাইরে অবস্থান করছিল। অবস্থানের কারণে কেউ ভেতরে প্রবেশ বা বের হতে পারেনি। পরে উপাচার্য বাসভবনে তালা খুলে দিয়েছে। কিন্তু প্রশাসনভবনসহ তিনভবন তালাবদ্ধ করেছে।’তিনি আরও বলেন, ‘সেগুলো এখনো তালাবদ্ধ আছে। তাদের দাবি ছিল এফসি মিটি বন্ধ করা। সেটি স্থগিত হয়েছে। পরে কি কারণে তিনভবনে তালা ঝুলিয়েছে বলতে পারব না।’
আগামী ৬ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে কি-না সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামী ৫ মে পর্যন্ত লকডাউন। এ কারণে আর কার্যক্রম চলবে না। তবে ৬ মে থেকে যথারীতি অফিসসহ যাবতীয় কার্যক্রম চলবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১১ জানুয়ারি চাকরির দাবিতে উপাচার্য ভবনে তালা লাগিয়েছিলেন চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।