ক্যাম্পাসের গাছ থেকে আম পাড়ায় এক শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় দেয়ার পর দুঃখ প্রকাশ করেছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সহকারী প্রক্টর প্রভাষক আরিফুল ইসলাম। শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে প্রক্টরিয়াল বডির এক আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে তিনি শিক্ষার্থী হেনস্তার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এসময় সেখানে প্রক্টর, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও প্রক্টরিয়াল বডির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় তার অভিযোগ প্রতিবেদন আকারে উপাচার্যের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী তার অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় তার অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। আগামীকাল (রোববার) উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন ও লিখিত অভিযোগ দাখিল করব। উপাচার্য মহোদয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম হাসান আলী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে স্ত্রীসহ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসেন। তার স্ত্রীও একই বিভাগের ও একই শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের পাশের আম গাছ থেকে আম পাড়তে ওঠেন হাসান। এসময় ওই পথে যাওয়ার সময় তাকে গাছে দেখতে পান সহকারী প্রক্টর আরিফ। এসময় তিনি তাকে গাছ থেকে নামতে বলেন। পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিচয় দিলেও সহকারী প্রক্টর তাকে ‘তুই-তুকারি’ করে জেরা করতে থাকেন। এসময় সহকারী প্রক্টর তার ক্ষমতার বাড়াবাড়ি করতে থাকেন বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার ভুল শিকার করে চলে যেতে চাইলে সহকারী প্রক্টর তার মুখে সজোরে থাপ্পড় মারেন। পরে হলের আনসার সদস্যকে ডেকে এনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার স্ত্রীকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ভেতরে নিয়ে যান। এসময় তাদের হলের গেস্ট রুমে আটকে রাখেন তিনি।
ঘণ্টাখানেক পর আরিফুল ইসলামসহ আরেক সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তিনি থাপ্পড় মারার বিষয় শুনে দুঃখ প্রকাশ করে প্রক্টরিয়াল বডির পক্ষ থেকে ক্ষমা চান। পরে তিনি তাদেরকে ছেড়ে দেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওইদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রে সহকারী প্রক্টর আরিফ কর্তৃক শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছনার বিষয়টি তুলে ধরে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হাসান আলী বলেন, ‘আজকের মিটিংয়ে ওই সহকারী প্রক্টর আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে স্যারের প্রতি আমার আর কোনো আক্রোশ নেই।’
এদিকে সহকারী প্রক্টর কর্তৃক শিক্ষার্থী হেনস্তার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন তার সহপাঠীসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই শিক্ষককে নিয়ে প্রতিবাদী কবিতা লিখতেও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী আমপাড়া কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডিকে বিষয়টি নিয়ে বসতে বলেছিলাম। তাদের থেকে লিখিত চেয়েছি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ফলফলাদি পাড়বেই। তাই বলে শিক্ষকদের তাদের প্রতি রুঢ় আচরণ করা কাম্য নয়। এটা শিক্ষকসম্মত আচরণ নয়।’