শিক্ষার ২০ দপ্তরের বিরুদ্ধে ৬ হাজার ৩টি মামলা ঝুলছে। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত মামলা ছিল ৫ হাজার ৯৬৯টি। গত এপ্রিল মাসে মামলা হয়েছে ৩৪টি। গত এপ্রিল মাসে ৫০৭টি মামলার জবাব পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে, মোট ৪ হাজার ২১০টি মামলা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিরুদ্ধে ৩৯৮টি, শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে ৩৮টি, ব্যানবেইসের বিরুদ্ধে ২১টি, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের বিরুদ্ধে ১১টি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে ১টি, এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে ৫৩৬টি, জাতীয় শিক্ষা একাডেমির (নায়েম) বিরুদ্ধে ৭টি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিরুদ্ধে ৪৪টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ১৫০টি, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ১৬৪টি, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ১০৭টি, যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ১০৪টি, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ৭৬টি, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ৬৬টি, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ৮৬টি, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ৬৫টি, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের বিরুদ্ধে ৪০টি এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো পরিচালনা করেন। আবার মাউশি অধিদপ্তরের আইন শাখার আইন কর্মকর্তা পদেও তারা। কেউ কেউ আইনে তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত। কেউ আইন শাখায় ১৪ বছর। রয়েছে সিন্ডিকেট। টাকা দিলেও পক্ষে বিপক্ষে মতামত পাওয়া যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষার সব দপ্তরের নিজস্ব আইন বিভাগ আছে। তারা মামলাগুলো পরিচালনা করে থাকে। তবে আমাদের কাছে যদি কোনো পরামর্শ চায়, আমরা তাদের সহায়তা করে থাকি।’
আরো পড়ুন: পদ্মা সেতু ভ্রমণ করা যাবে ১১৯৯ টাকায়
আরো পড়ুন: স্কার, ইউএস বাংলা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ইবনে সিনায় চাকরির সুযোগ
আরো পড়ুন: ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে রাজশাহীর তিন উপজেলা
আরো পড়ুন: পায়রা বন্দরে সরাসরি সাক্ষাৎকারে চাকরি
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক এবং মৌলভী শিক্ষক পদে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ প্রার্থী বাছাই ও নিয়োগের সুপারিশ করে আসছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। দক্ষ শিক্ষক দ্রুত নিয়োগ দিতেই এনটিআরসিএর হাতে ক্ষমতা দেয় সরকার। কিন্তু মামলায় বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। দুই বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধও রাখতে হয়েছিল। নিয়োগ-কার্যক্রম শুরুর সাত বছরে তাদের ঘাড়ে ৫৩৬টি মামলা ঝুলছে। প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য। মামলাজটে ধীরে এগোচ্ছে তাদের কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে এক শ্রেণির উকিল ও এনটিআরসিএর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে এসব মামলা ঝুলছে বছরের পর বছর। আবার রিটও করা হচ্ছে এদের পরামর্শেই।
মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ মাসিক সমন্বয় সভায় জোরেশোরে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে মামলাগুলোর ডেটাবেজ তৈরি করা, মামলাগুলোর এন্ট্রি সম্পন্ন করা ও ডুপ্লিকেশন এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করা, এন্ট্রি হওয়া মামলা নিয়মিত হালনাগাদ করা ও প্রতি মাসে তুলনামূলক অগ্রগতি সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা, আইন অনুবিভাগকে দপ্তর-সংস্থার মামলা নিয়ে প্রতি মাসে একটি সভা করা, প্রতি মাসের সমন্বয় সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০টি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার তথ্য উপস্থাপন করা এবং সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে কতটি মামলার আদেশ হয়েছে ও কতটি মামলার আপিল দায়ের ও জবাব পাঠানো হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ প্রতি মাসে প্রতিবেদন দাখিল করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে গত মে মাসের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি মামলা হচ্ছে ১৯৮১ সালের আত্তীকরণ বিধি অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতির দাবিতে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রভাষক এসএম তালেবুল ইসলাম গং এবং বরগুনা সরকারি কলেজের প্রভাষক ওমর খৈয়াম গংয়ের মামলা। বেসরকারি আমলের পদ-পদবি, বেতন, পদোন্নতি ও উচ্চতর গ্রেডের দাবিতে লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ রুকসীর করা দুটি মামলা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত বিষয়ে আবদুর রহিম গংয়ের করা মামলা; প্রকল্পের চাকরির বেতনভাতার দাবিতে রমাকান্ত মজুমদারের মামলা; বরখাস্তকালীন বকেয়ার দাবিতে জামালপুর জেলার ইসলামপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. সুলতান সালাউদ্দিনের মামলা এবং শিক্ষকদের গ্রেডেশন লিস্টকে চ্যালেঞ্জ করে সবুজবাগ সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক লুবনা নাদিয়া লোপা ও ১২৪ জনের করা মামলা। এছাড়া ২০০০ বিধিতে আত্তীকৃত শিক্ষকদের পদোন্নতির দাবিতে গোপালগঞ্জের সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমানের মামলা এবং এমপিওভুক্তির দাবিতে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সারোয়ার হোসেনের মামলা।
গত মে মাসে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধেও ১০টি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তালিকা করা হয়। সেগুলোর মধ্যে ৯টিই হচ্ছে ১৩তম নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের দাবিতে করা মামলা। অন্যটি হচ্ছে আইসিটি শিক্ষকদের তাদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে করা মামলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনটিআরসিএ কর্তৃক ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের সবাই নিয়োগ না পাওয়ায় ২ হাজার ৫০০ জন সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে কয়েকটি রিট করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে তাদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ। কিন্তু এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ রায়ের সার্টিফায়েড কপির জন্য অপেক্ষা করছে। যদি তারা এ রায়ের ব্যাপারে আপিলের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আবারও এনটিআরসিএর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।- সূত্র: দৈনিক শিক্ষা