পিএসসি। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এবার বিসিএসের খাতা দেখা পরীক্ষকদের ভুল সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। পিএসসি বলছে, ভবিষ্যতে যাতে পরীক্ষকেরা খাতা দেখতে ভুল না করেন, সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্যোগের পরেও যদি কোনো পরীক্ষক ভুলের পুনরাবৃত্তি করেন, তাহলে তাঁকে পরীক্ষকদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি।
পিএসসি পরীক্ষকদের ভুল কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশেষ একটি সেমিনার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সেমিনারে পরীক্ষকদের পিএসসিতে ডাকা শুরু করেছে। পিএসসির একজন সদস্য বলেন, ৪১তম বিসিএসে যেসব পরীক্ষক তুলনামূলক কম ভুল করেছেন তাঁদের ডাকা হচ্ছে। বিসিএসের পরীক্ষক হিসেবে এই সেমিনারে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখানে থাকা পরীক্ষকরাই মূলত ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার সুযোগ পাবেন।
সেমিনারে কী কী হচ্ছে, জানতে চাইলে ওই সদস্য বলেন, ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে পিএসসির তদন্ত কমিটি দেখেন পরীক্ষকদের ভুলের কারণে ফল দিতে দেরি হচ্ছে। তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে খাতা না দেখায় এমনটা হয়েছে।
আসছে ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার পালা। সেখানে যাতে একই ভুল আর না হয়, সে জন্য পিএসসি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার থেকে পিএসসির মিলনায়তনে সেমিনারে পরীক্ষকদের খাতা দেখার জন্য একটি কমন গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে পরীক্ষকদের। সেখানে চাকরিপ্রার্থীদের নাম–পরিচয় গোপন রেখে পরীক্ষা হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের খাতা দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া পরীক্ষকেরা যেসব ভুল সবচেয়ে বেশি করেন, সেগুলো চিহ্নিত করে দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব ভুল করা যাবে না, সেগুলোও দেখানো হচ্ছে। যেসব খাতায় পরীক্ষক অনেক ভুল করেছেন, সেসব খাতায় ভুলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো কেন ও কীভাবে ভুল, তা প্রেজেন্টেশনে দেখানো হচ্ছে। এই সেমিনারে প্রতিদিন ১০০ পরীক্ষক অংশ নিচ্ছেন। একই ভুল যদি কোনো পরীক্ষক আবার করেন, তাহলে তাঁদের পরীক্ষক হিসেবে আর পিএসসিতে রাখা হবে না বলেও সেমিনারে বলে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় পরীক্ষকেরা বেশি ভুল করেন ও খাতা দেখতে বেশি সময় নেন। আমরা এই সময় কমিয়ে আনতে চাই। এ জন্য বিশেষ সেমিনারের ব্যবস্থা করেছি।’ সেখানে একটি গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে এখানে অংশ নেওয়া পরীক্ষকেরা নিজেরা লাভবান হবেন। একই সঙ্গে পরীক্ষার্থীরাও লাভবান হবেন। ফল প্রকাশে সময় কম লাগবে। সব পরীক্ষককে ডাকা হচ্ছে, যারা উপস্থিত থাকবেন, শুধু তাঁদেরই খাতা দেখতে দেওয়া হবে। অন্যরা যাঁরা অনুপস্থিত থাকবেন, তাঁরা কোনোভাবেই খাতা পাবে না।
৪১তম বিসিএসের ফল দেরির জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেউ কেউ পরীক্ষার্থীর কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য নম্বরই দেননি। অনেকে খাতার শেষে থাকা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। কোনো কোনো খাতায় পরীক্ষক নম্বরের যোগফলে ভুল করেছেন। অনেকে আবার এমনভাবে নম্বর দিয়েছেন, যা পুনর্মূল্যায়নের জন্য তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠাতে হয়েছে।
কমিটি সম্প্রতি যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে ফল প্রকাশে দেরি হওয়ার জন্য পরীক্ষকদের দায়িত্বে গুরুতর অবহেলার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘ভয়াবহ দায়িত্বে অবহেলা’ হিসেবে।- দৈনিক শিক্ষা