নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘বেকার অবস্থায় আর কত দিন? শিক্ষকতা করতাম কিন্ডার গার্ডেনে। ছয় মাস ধরে বন্ধ। হাতে যে টাকা ছিলো, বসে খেয়ে শেষ। কী করবো উপায় নেই। দুই মাস ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছি।’ আজ বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিনোদপুর বাজারে অটোরিকশায় বসে এভাবে বলছিলেন আশরাফুল ইসলাম (২৫) (ছদ্মনাম)।
তিনি বলেন, ‘লজ্জা করে অনেকদিন কোনো কাজে যায়নি। শেষ পর্যন্ত দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মা ও স্ত্রী-সন্তান মিলে চারজনের সংসার। উপান্তর না পেয়ে ধরেছি অটোর হ্যান্ডেল। লজ্জা করলে না খেয়ে মরতে হবে।’
অন্যদিকে, দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাতে করোনা দুর্যোগকালে শিক্ষকতা ছেড়ে অনেকেই নেমেছেন বিভিন্ন পেশায়। অনেকেরই ধারণা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরো দমে খুললে আবার ফিরবে কাজে। তবে সেই চাকরি ফিরে পাওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়। কোনো কোনো কিন্ডার গার্ডেন মালিক গুটিয়েছেন এই ব্যবসা। মালিকদের গলার কাটা ঘর ভাড়া, রয়েছে শিক্ষকদের বেতনও।
রাজশাহী কিন্ডার গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো. ইব্রাহীম জানান, ‘কিন্ডার গার্ডেন বন্ধ করেছেন অনেকেই। তবে এর সংখ্যাও কম নয়। রাজশাহী শহর ও আশেপাশে মিলে ৩০টির বেশি কিন্ডার গার্ডেন বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ভেড়িপাড়া মোড়ের প্রতিজ্ঞা, বরেণ্য স্কুল, লিডিং স্কুল ইত্যাদি।’
তিনি জানান, ‘পুরো দমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে খুলতে এর সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে অনেকেই ফিরে আসতে পারবে না, কারণ তারা পুঁজি হারিয়েছেন। কারও নিজস্ব ফান্ড (তহবিল) নেই। তবে বাড়ি ভাড়া তাদের ছিলো গলার কাটা।’
দেশে প্রথম করোনা রোগি শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সে হিসেবে করোনাকাল যাচ্ছে টানা ছয় মাস। এ সময়কালে বন্ধ রয়েছে সব কিন্ডার গার্ডেন। এমন অবস্থায় বেকার হয়েছেন হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।
যদিও রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, ‘জেলায় ৪২৪টি কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে।’ গড়ে ১২ জন করে শিক্ষক-কর্মচারী ধরলেও ৫ হাজার ৮৮ জন হচ্ছে। এই শিক্ষক-কর্মচারীরা বেকার অবস্থায় দিন পার করছেন।
অন্যদিকে, রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানিয়েছিলেন, রাজশাহী জেলায় এক হাজার ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে পিটিআইসহ। আর এই জেলায় ৪২৪টি কিন্ডার গার্ডেন (কেজি স্কুল) রয়েছে। শুধু রাজশাহী মহানগরীতে (বোয়ালিয়া) কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে ১৩৩টি, পবায় ৭৩টি, গোদাগাড়ীতে ৪৫টি, চারঘাটে ২৩টি, তানোরে ১৩টি, দুর্গাপুরে ১৮টি, পুঠিয়ায় ১৮টি, বাগমারায় ৫৪টি, বাঘায় ২৩টি ও মোহনপুরে ২৪টি। রাজশাহী কিন্ডার গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম সারোয়ার স্বপন বলেন, ‘নগরে প্রায় ১৭৫ টি কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে। এতে প্রায় ২৬শোর বেশি শিক্ষক-কর্মচারী কাজ করতেন। বন্ধ হয়েছে ৩০টির বেশি কিন্ডার গার্ডেন।’
তিনি আরও জানান, ‘গড়ে একেকটি কিন্ডার গার্ডেনে ১২ জন করে শিক্ষক কর্মচারী কাজ করে। কিন্ডার গার্ডেন বন্ধ, তাই বেকার অনেকেই।’