নিজস্ব প্রতিবেদক:
২২ বছর পরে জানলেন তিনি শিক্ষক নন! ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক (মৌলভী) পদে ২২ বছর চাকরি করেছেন আইনাল হক। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলছেন, এই নামে কোন শিক্ষক নেই। সেই পদে অন্য একজন কর্মরত আছে বলে দাবি করছেন তিনি। সম্প্রতি নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় স্থান পাওয়া রাজশাহীর মোহনপুরের ঘাসিগ্রাম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে আরও দুই শিক্ষককে ভুয়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর ওই নিয়োগ বাতিলের দাবিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বড় দেওপুর গ্রামের মৃত দানেচ আলীর ছেলে আইনাল হক। তার দাবি তিনিই ওই পদে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুলাই নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পায়। তার পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের এমন তালবাহানা শুরু হয়েছে।
আরো পড়ুন: সপ্তাহের সেরা চাকরি: ১0 সেপ্টেম্বর ২০২২
আরো পড়ুন: রাবি ‘বি’ ইউনিটের দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ
আরো পড়ুন: বন অধিদপ্তর, ড্রাগ ও মদিনায় চাকরি
অভিযোগে আইনাল হক জানিয়েছেন, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাই আইনাল হক ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক (মৌলভী) পদে ঘাসিগ্রাম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় নিযোগপ্রাপ্ত হন। নিয়োগ পাওয়ার দুইদিন পরে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে ২০০৮ ও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলের মনোনীত শিক্ষক হিসেবে দুটি প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন তিনি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির তালিকায় আসার পর প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে সভাপতি তিনজন শিক্ষককে ভুয়াভাবে নিয়োগ দেন।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, সহকারী মৌলভী শিক্ষক পদে আমার নাম পরিবর্তন করে জাহাঙ্গীর আলম নামের একজনকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুলাই থেকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে (কৃষি) দুলাল রাব্বানীকে গত ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ মে নিয়োগ দেখানো হলেও তিনি কৃষি ডিপ্লোমা পাস করেছেন ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে। অভিযোগ রয়েছে সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার পদে রাশেদা খাতুনকে ভুয়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগকারী শিক্ষক আইনাল হক বলেন, আমি ঘাসিগ্রাম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুলাই বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। নিয়োমিত পাঠদান দিয়ে আসছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে একই বছরের ১০ জুলাই জাহাঙ্গীর নামের একজনকে আমার পদেই শিক্ষক হিসেবে ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে আমাকে পাঠদানে বাধা দেন। যা সম্পূর্ণভাবে বিধি বহির্ভূত। প্রতিকার চেয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর, রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, মৌলভী পদে আইনাল নামের কাউকে আমার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়নি। রেজুলেশন দেখা গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কেউ করলে তা ভুয়াভাবে করে থাকতে পারে। ওই পদের নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন জাহাঙ্গীর।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, অনেক দিনের ঘটনা। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন উনি ভাল বলতে পারবেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি আফাজ উদ্দিন জানান, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষক তালিকায় মৌলভী শিক্ষক হিসেবে ২০০০ সালে জাহাঙ্গির আলম নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। আইনাল নামের এক ছেলে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে শিক্ষক দাবি করে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন।’
মোহনপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুক্তাদির আহম্মেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।’